শুক্রবার, ৯ মার্চ, ২০১২

ইএসপি ও টেলিপ্যাথিবিজ্ঞানের নামে প্রতারণা


এক বন্ধুকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছিখাওয়া-ধাওয়া আর গল্প-সল্প সবই হচ্ছিলহঠা বিষম লাগলো আমাররীতিমতো বেকায়দায় পড়ে গেলামহাঁচির দমকে টেবিল ফেলে দেবার দশা আর পাশে বসে দিব্যি হাসছে আমার প্রিয় বন্ধুটিকৌতুহলে তাকাতেই- তোমার কথা মনে করছে, কেউহাসতে হাসতে বললোআমার এই বন্ধুটি যা বলেছে, ঠিক সেই কথাগুলো আমরা হরহামেশা শুনি; যখনই খেতে বসে কারো বিষম লাগে, তখনইকনক্লুসন হলো- কেউ যদি কাউকে স্মরণ করে এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি যদি তখন খাবার টেবিলে থাকে তখনই বিষম লাগতে পারেলাগবেই, এটা জোর দিয়ে বলা যায় নাকারণ এই ঘটনা নির্ভর করছে স্মরণকারী ও যাকে স্মরণ করা হচ্ছে এই ব্যক্তির সম্পর্কের মধ্যেএই ছোট্ট ঘটনার তাপর্যপূর্ণ দিক হলো- এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বাস করতে চাচ্ছি একজনের ভাবনাআর একজনের কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করতে পারেঅর্থা কোনো ক্ষেত্রে ভাবনাবা চিন্তার সাহায্যে অপর কোনো ব্যক্তিকে প্রভাবিত করা যায়অথবা নিজের ভাবনা তার মধ্যে সঞ্চারিত করা সম্ভব
যেমন এই গল্পটির কথা ভাবুন- কোনো ধনীর দুলালীর সন্তান হলো, যা ঐ মেয়ের অভিভাবকদের অনাকাংক্ষিতবাবা-মা প্ল্যান করে মেয়েকে বোঝালো সে একটি মৃত সন্তান প্রসব করেছেআসলে, সুস্থ সন্তানটিকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া হলোকিছুদিন পর দেখা গেলো ঐ ধনীর দুলালী সব সময় কানের কাছে মাডাক শুনতে পাচ্ছেশুধু তাই নয়, দেখা গেল দিনের পর দিন ঐ ডাক স্পষ্ট ও জোরালো হয়ে উঠছেস্বভাবতই এরপর গল্পে একজন সৌম্য, দাড়িওয়ালা মনোবিজ্ঞানীর আবির্ভাব ঘটেমনোবিজ্ঞানীর আবির্ভাব ঘটে মনোবিজ্ঞানী আবার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং লজিক ছাড়া এন্টিলজিকের ধারে-কাছেও যান নামনোবিজ্ঞানী ঘোষণা করলেন-ঐ মেয়ের হারিয়ে যাওয়া সন্তান দূরে কোথাও থেকে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে এবং সফল হচ্ছেবলার ভঙ্গিমার কারণে এই ধরনের গল্প প্রায়শ: বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে এবং পাঠকদের বিশাল অংশই টেলিপ্যাথিনামক কারো কারো একটি বিশেষ ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যান
বেশ, টেলিপ্যাথি কি? সংক্ষেপে, এ হলো কোনো রকম মাধ্যম ছাড়া দূরবর্তী কোনো স্থান থেকে চিন্তার ট্রান্সমিশনআর টেলিপ্যাথির মূল অর্থ হলো- চাপাবাজি ও প্রতারণা টেলিপ্যাথিকে গুরুত্ব দেন মনোবিদদের একটি বিশেষ দলএনারা নিজেদের বলেন, পরামনোবিদ (প্যারা সাইকোলজিষ্ট)আসলে হলেন বিশুদ্ধ চাপাবাজ (অথবা বোকা)এই পরামনোবিদ্যা (প্যারা সাইকোলজিষ্ট) অনুসারে টেলিপ্যাথি হলো এক প্রকার অতীন্দ্রিয় অনুভূতি, একস্ট্রা সেনসরি পারসেপশন বা সংক্ষেপে ইএপসি (ঊঝচ)অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার মানে হলো প্রকৃতির সঙ্গে বোঝাপড়া করার মানুষের যে পাঁচ ইন্দ্রিয় আছে, তার বাইরের কোনো ব্যাপার- স্পাই থ্রিলারের স্পাইদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ব্রিটিশ জেমস বন্ড কিংবা আমাদের মাসুদ রানা, এদের সবারই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়খুব শার্পনতুবা ঠ্যালা সামলানো খুবই কঠিন হবে যে!
ইএসপি বোঝানোর খুব সহজ ব্যাপার আছেধরুন, আপনি কোনো পরিসংখ্যান অফিসে চাকুরী করেনআপনার কাজ হলো মানুষের বাসায় টেলিফোন করে ঐ বাসায় একটি বিশেষ সাবান ব্যবহৃত হয় কি না তা খোঁজ নেয়াআপনি টেলিফোন ডাইরেক্টরী থেকে দশটি নম্বর বাছাই করলেন এবং আশ্চর্য হয়ে জানলেন ঐ দশটি বাসাতেই আপনার কাংক্ষিত সাবানটি ব্যবহার হচ্ছেআপনি খুব অবাক হতে পারেন, আবার নাও হতে পারেন কিন্তু আমরা ইতিমধ্যেই বুঝতে পারবো আপনার ইএসপি অসাধারণপরামনোবিদদের ভাষায় চিন্তা হলো তরঙ্গযখনই কেউ চিন্তা করে তখন সে আসলে তরঙ্গতৈরি করেমানুষ ঐ তরঙ্গের গ্রাহকযন্ত্র (রিসিভার) হিসেবে কাজ করতে সক্ষমকাজেই, ফ্রিকুয়েন্সি মিললে একজনের ভাবনা আর একজনের কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে ওঠেবলা বাহুল্য যে, এই ধরনের চিন্তা তরঙ্গের কোনো অস্তিত্ব আজ পর্যন্ত আবি®কৃত হয়নিহওয়ার কথাও নয়আর মানুষের মাথা যে রিসিভার নয়, তার বড় প্রমাণ আপনি নিজেকারণ, প্রতি মুহূর্তে আপনার চারপাশে বিস্তর তথ্য এদিক-সেদিক হচ্ছে, মাইক্রোওয়েভে বা বেতার তরঙ্গেএ সবের কিছুই আপনার এন্টেনা ধরতে পারছে না
ইএসপি ও টেলিপ্যাথিকে পুঁজি করে এই জগতে প্রচুর প্রতারকের আবির্ভাব ঘটেছে, ঘটছে এবং ঘটবেও যদি না সমাজ থেকে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে ঝেটিয়ে দূর করা যায় টেলিপ্যাথি সম্রাট নামে বিখ্যাত এই ধরনের একজন ধুরন্ধর প্রতারকের নাম ইউরি গেলার দীর্ঘ সময় ধরে, প্রচুর বোকা মানুষকে মোহিত করে ভদ্রলোকে অনেক টাকা কামিয়েছেন জারিজুরি ফাঁস হবার পর ভদ্রলোকের ইদানিং ব্যবসা মন্দাতবে, তাকে নিয়ে গালগল্প ফাঁদবারতো লোকের অভাব নেই এদেশেবিশেষ করে হাটখোলার সাপ্তাহিক ও সেগুনবাগিচার মাসিক পত্রিকাতো পাল্লা দিয়ে লিখেই চলছে
আপনার আশপাশে যে সব টেলিপ্যাথিক ক্ষমতার অধিকারী পীর, ফকির ও সাধুবাজীরা আছেন তাদেরকে দুটো পরীক্ষা করে দেখতে পারেনপ্রথমতঃ পকেট থেকে একটি টাকার নোট বের করে সেদিকে তাকিয়ে থাকুনখেয়াল রাখবেন টেলিপ্যাথিক বাবা যেন সেটি দেখতে না পায় এবার বাবাজীকে নোটের নম্বর জিজ্ঞেস করুনঅথবা বাবাজির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বাবাজীকে একটি কষে গালি দিনতারপরে জিজ্ঞেস করুন আপনার ভাবনা বাবাজী ধরতে পেরেছে কি না
পুনশ্চঃ যে বিষম খাওয়া নিয়ে এই লেখার শুরু সেই বিষম খাওয়ার মূল ব্যাপারটি, পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিখাদ্য বা পানি উদরে যাবার সময় অন্ননালীর পরিবর্তে যদি শ্বাসনালীতে ঢুকে পড়ে তাহলে শ্বাস রোধকারী একটা অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং প্রতিবর্তী ক্রিয়া হিসেবে হিক্কা, হাঁচির মাধ্যমে দুরবস্থার নিরসন হয়
Share this article :

0 লিখুন পোস্ট সম্পর্কে:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 

WELCOME_PRINCE COMPUTER & MOBILE SOFTWARE. - Copyright © 2012 - All Rights Reserved | Blogger Theme by BTDesigner | Proudly powered by Blogger