ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছি। সঙ্গে এক ভাবী ও ভাইঝি। মাঝপথে হঠাৎ খেয়াল করলাম, ভাইঝির কপালে এক মস্ত বড় টিপ। ৭/৮ মাসের শিশু হলেও, মেয়েতো- তাই প্রথমে ততটা অবাক হইনি। কিন্তু ভাল করে লক্ষ্য করতেই গলদটা ধরতে পারলাম। না, কপালের মাঝখানে নয়, ভাইঝির কপালের এক পামে অনেকটা থ্যাবড়ানো ভঙ্গিতে দেয়া হয়েছে। কালো কাজলের টিপ। সৌন্দর্য বর্ধন নিশ্চয়ই নয়। মনে পড়লো, অল্প বয়স্ক শিমুদের কপালে এই ধরনের টিপ দেখা যায়ই। সৌন্দর্য নয়, তাহলে? ভাবীর কাছ থেকে উত্তরটা পেয়ে গেলাম। ঐ কালো কাজল টিপের মাহাত্ম সৌন্দর্য বৃদ্ধি নয়-বরং ‘নজর’ কাটানো! কার নজর? কিসের নজর? প্রথমত হিংসুটে ঈর্ষাপরায়ণ মানুষের নজর। স্বাভাবিকভাবেই শিমুদের সৌন্দর্যভাবটা থাকে প্রকাশিত। ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তিদের কাছে শিশুর সৌন্দর্য পছন্দ নাও হতে পারে। এতে সম্ভাবনা থাকে ‘নজর’ কিংবা ‘কুনজর’ লাগার। এর ফলে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে শিমুটি। যেমন- শিশুটির হাম হতে পারে, হতে পারে ভীষণ জ্বর কিংবা আরো কিছু।
হিংসুটে কিংবা বদমতলবী ব্যক্তিদের নজর লাগবে তাও নয়। এমনকি, শিশুর কোন শুভার্থীও যদি হঠাৎ বলে ফেলে- ‘এমা, এষে দিখছি স্বর্গের পরী’, কিংবা ‘তোমার ছেলেতো বড় হয়ে লেডি কিলার হবে’- তাহলেও কিন্তু এমন সর্বনাশ হতে পারে। তবে, সেসব ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ‘ব্যবস্থা’ নেয়া হয়-ঐ ব্যক্তি শিশুটির মাথা ছুয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে কিংবা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে। মানুষ ছাড়াও অন্যকিছু, রাতের বেলায় যাদের নাম নেয়া যায় না কিংবা যাদের কোন ছায়া পড়ে না তাদেরও নজর পড়তে পারে শিশুর প্রতি। কাজেই সময় থাকতেই কাজল টিপ।
কোথা থেকে এলো?
সভ্যতার বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ অনেক কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলেছে। কিন্তু একই সঙ্গে এক দল মানুষ অস্বস্তিহীন আজগুবী আকাশীর তত্ত্ব কাহিনীর অবতারণাও করেছে। যার ফলস্বরূপ নিত্যনতুন কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস। অন্ধকারের যেসব জীবের/বস্তুর কল্পনা মানুষ করে তার মধ্যে অপদেবতা হলো অন্যতম। বিশ্বের অন্যতম ফন্দিবাজ, প্রতারক সুইজারল্যান্ডের এরিক ফন দানিকেন। ভদ্রলোক নিশ্চিতভাবে বলেন, দেবতারা অন্যগ্রহের বুদ্ধিমান জীব। এহেন দানিকেনও কিন্তু অপদেবতাদের ব্যাপারে কিছু বলেননি। তাই এইসব অবদেবতাদের কাজ কি? না, তাদের ঘর-সংসার নেই, শুধু মানুষের পেছনে লেগে থাকা। তবে এক্ষেত্রে কিছু বাছবিচার আছে। অপদেবতা হলেও তাদের সৌন্দর্য জ্ঞান বেশি। কেননা, দেখা যায় উঠতি বয়সের সুন্দরী মেয়েদের প্রতি এসব অপদেবতাদের পক্ষপাত বেশি।
তবে, বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের সমস্যা ভিন্ন। বয়স্করা চেষ্টা করলে অপদেবতাদের নজর এড়াতে পারে (যেমন সন্ধ্যাবেলায় এলোচুলে বাঁশবনের পাশ দিয়ে না যাওয়া ইত্যাদি)। কিন্তু শিশুরা তা পারে না। সে কারণে শিশুর অভিভাবকদের মহৎ (?) দায়িত্ব হচ্ছে তার সুন্দর শিশুটির ‘কুৎসিৎ’ বানিয়ে রাখা যাতে সে বাড়তি মনোযোগ না পায়।
এই অভাগা দেশে এখনও মৃত্যুর জন্য ‘যম রাজা’কে দায়ী করা হয়। যে দম্পতির সন্তান বাঁচেনা, তারা শেষের শিশুটির নাম রাখে ‘পচা’, যাতে যমের তাকে পছন্দ না হয়। এভাবে যমরাজাকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা হয়ে থাকে।
আসলে কি? ঘোড়ার ডিম
যেভাবেই দেখুন না কেন, একটু চিন্তা করলেই কিন্তু বুঝতে পারা যায়- মানুষ কিংবা অপদেবতা, যাই হোক কারোই ‘নজর দেয়ার’ মতো কোন ক্ষমতা নাই। ইচ্ছা পোষণ করে, কাউকে মুখে অভিশাপ দিয়ে, আর যাই হোক কোন জীবিত প্রাণীর শারীরিক ক্ষতি করা যায় না। শিশুদেরতো নয়ই। অভিশাপ কিংবা নজর দেবার সাইকোলজিক্যাল কোন ক্ষতিও তার হয় না। যেসব দম্পতির সন্তান ঠিকমতো বাঁচে না, তাদের বরং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। ‘পচা’ নাম রেখে ছেলেকে বাঁচানো যায় না। তার চেয়ে সন্তান ধারণকালের মধ্যে যথেষ্ট বিরতি, মা ও শিশুর জন্যে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করলেই ঘন ঘন সন্তানের মৃত্যু ঠেকানো যাবে।
হবেটা কি?
মুশকিল হচ্ছে এই অভাগা দেশে আমার ভাবীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভাবীর শ্বশুর একজন এমবিবিএস ডাক্তার। সকাল বেলায় নাতনীর কপালে কাজল টিপ না থাকলে পাড়া মাথায় তোলেন। অর্থাৎ জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতা ও ডাক্তারীবিদ্যা মার খেয়ে যাচ্ছে স্রেফ কুসংস্কারের কাছে। শিক্ষিত সমাজেই যদি এই হাল হয়, তাহলে এই অবস্থা থেকে দেশের মুক্তি কিভাবে সম্ভব হবে?
হিংসুটে কিংবা বদমতলবী ব্যক্তিদের নজর লাগবে তাও নয়। এমনকি, শিশুর কোন শুভার্থীও যদি হঠাৎ বলে ফেলে- ‘এমা, এষে দিখছি স্বর্গের পরী’, কিংবা ‘তোমার ছেলেতো বড় হয়ে লেডি কিলার হবে’- তাহলেও কিন্তু এমন সর্বনাশ হতে পারে। তবে, সেসব ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ‘ব্যবস্থা’ নেয়া হয়-ঐ ব্যক্তি শিশুটির মাথা ছুয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে কিংবা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে। মানুষ ছাড়াও অন্যকিছু, রাতের বেলায় যাদের নাম নেয়া যায় না কিংবা যাদের কোন ছায়া পড়ে না তাদেরও নজর পড়তে পারে শিশুর প্রতি। কাজেই সময় থাকতেই কাজল টিপ।
কোথা থেকে এলো?
সভ্যতার বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ অনেক কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলেছে। কিন্তু একই সঙ্গে এক দল মানুষ অস্বস্তিহীন আজগুবী আকাশীর তত্ত্ব কাহিনীর অবতারণাও করেছে। যার ফলস্বরূপ নিত্যনতুন কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস। অন্ধকারের যেসব জীবের/বস্তুর কল্পনা মানুষ করে তার মধ্যে অপদেবতা হলো অন্যতম। বিশ্বের অন্যতম ফন্দিবাজ, প্রতারক সুইজারল্যান্ডের এরিক ফন দানিকেন। ভদ্রলোক নিশ্চিতভাবে বলেন, দেবতারা অন্যগ্রহের বুদ্ধিমান জীব। এহেন দানিকেনও কিন্তু অপদেবতাদের ব্যাপারে কিছু বলেননি। তাই এইসব অবদেবতাদের কাজ কি? না, তাদের ঘর-সংসার নেই, শুধু মানুষের পেছনে লেগে থাকা। তবে এক্ষেত্রে কিছু বাছবিচার আছে। অপদেবতা হলেও তাদের সৌন্দর্য জ্ঞান বেশি। কেননা, দেখা যায় উঠতি বয়সের সুন্দরী মেয়েদের প্রতি এসব অপদেবতাদের পক্ষপাত বেশি।
তবে, বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের সমস্যা ভিন্ন। বয়স্করা চেষ্টা করলে অপদেবতাদের নজর এড়াতে পারে (যেমন সন্ধ্যাবেলায় এলোচুলে বাঁশবনের পাশ দিয়ে না যাওয়া ইত্যাদি)। কিন্তু শিশুরা তা পারে না। সে কারণে শিশুর অভিভাবকদের মহৎ (?) দায়িত্ব হচ্ছে তার সুন্দর শিশুটির ‘কুৎসিৎ’ বানিয়ে রাখা যাতে সে বাড়তি মনোযোগ না পায়।
এই অভাগা দেশে এখনও মৃত্যুর জন্য ‘যম রাজা’কে দায়ী করা হয়। যে দম্পতির সন্তান বাঁচেনা, তারা শেষের শিশুটির নাম রাখে ‘পচা’, যাতে যমের তাকে পছন্দ না হয়। এভাবে যমরাজাকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা হয়ে থাকে।
আসলে কি? ঘোড়ার ডিম
যেভাবেই দেখুন না কেন, একটু চিন্তা করলেই কিন্তু বুঝতে পারা যায়- মানুষ কিংবা অপদেবতা, যাই হোক কারোই ‘নজর দেয়ার’ মতো কোন ক্ষমতা নাই। ইচ্ছা পোষণ করে, কাউকে মুখে অভিশাপ দিয়ে, আর যাই হোক কোন জীবিত প্রাণীর শারীরিক ক্ষতি করা যায় না। শিশুদেরতো নয়ই। অভিশাপ কিংবা নজর দেবার সাইকোলজিক্যাল কোন ক্ষতিও তার হয় না। যেসব দম্পতির সন্তান ঠিকমতো বাঁচে না, তাদের বরং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। ‘পচা’ নাম রেখে ছেলেকে বাঁচানো যায় না। তার চেয়ে সন্তান ধারণকালের মধ্যে যথেষ্ট বিরতি, মা ও শিশুর জন্যে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা নিশ্চিত করলেই ঘন ঘন সন্তানের মৃত্যু ঠেকানো যাবে।
হবেটা কি?
মুশকিল হচ্ছে এই অভাগা দেশে আমার ভাবীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভাবীর শ্বশুর একজন এমবিবিএস ডাক্তার। সকাল বেলায় নাতনীর কপালে কাজল টিপ না থাকলে পাড়া মাথায় তোলেন। অর্থাৎ জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতা ও ডাক্তারীবিদ্যা মার খেয়ে যাচ্ছে স্রেফ কুসংস্কারের কাছে। শিক্ষিত সমাজেই যদি এই হাল হয়, তাহলে এই অবস্থা থেকে দেশের মুক্তি কিভাবে সম্ভব হবে?
0 লিখুন পোস্ট সম্পর্কে:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন