শুক্রবার, ৯ মার্চ, ২০১২

জীবনের অঙ্ক ও কোকাকোলার গাড়ি

0 লিখুন পোস্ট সম্পর্কে

মানুষের জীবন অঙ্কনির্ভরজীবনের অঙ্ক ভুল হওয়া মানেই কর্মক্ষেত্রে বিপর্যটা ঘটাযার জীবনের অঙ্ক যতো নির্ভুল তার জীবন ততো স্বচ্ছো ও নির্মলহাটখোলার মোড় থেকে প্রকাশিত দৈনিকটির একটি বিজ্ঞাপনের ভাষ্য থেকে ওপরের অংশটুকু নেয়া বিজ্ঞাপনের শিরোনাম জীবনের অঙ্কপাঠকরা ইতিমধ্যেই টের পেয়েছেন, এটি একজন জ্যোতিষ বাবাজির বিজ্ঞাপনতিনি অভয় দিয়ে জানাচ্ছেন, যাদের জীবনের অঙ্ক মিলছে না- তাদের জীবনের অঙ্ক মিলিয়ে দেবেনমহ প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহেযুগে যুগে এসব ধর্মাবতাররা মানুষের জীবনের অঙ্ক মিলিয়ে দেবার জন্য কতোই না কষ্ট করেছেনপরিশ্রম করে, বুদ্ধি খাটিয়ে, নানা রকম ফন্দি-ফিকির বের করেছেন, যাতে করে বোকা, অসহায়, অদৃষ্টবাদী মানুষের জীবনের অঙ্ক মিলিয়ে দেওয়া যায়বিনিময়ে তারা কিইবা পান- সমাজে যথেষ্ট সম্মান পান না, আমার মতো দুপাতা বিজ্ঞান পড়া লোকেরা তাদের নিয়ে ইয়ারকি-ফাজলামো করেশুধু তাই নয়, ইনকাম ট্যাক্সের লোকজনও মাঝে-মধ্যে জ্বালাতন করেভাবখানা- না জানি কতো টাকা তারা কামিয়ে নিচ্ছেনকেউ যদি কলাটা মূলোটা দেয়- তা নেওয়া কি দোষেরপাঠক, আপনিই বিচার করুন
যাকগে, অঙ্কবিদের কথা থাকবরং জীবনের অংকের উপত্তিটা খোঁজা যাকপ্রাচীন গ্রীসের এক গণিতবিদ পিথাগোরাস। (ভদ্রলোকের নাম বহুল পরিচিতস্কুল জীবনে তার নামে পরিচিত একটি জ্যামিতিক উপপাদ্য বিশ্লেষণে অক্ষম হয়ে মাস্টার মশাইয়ের চড়-থাপ্পড় খাওয়ার ইতিহাস সহজে ভুলে যাবার নয়)পিথাগোরাস শুধু গণিতবিদ ছিলেন না, তিনি একজন দার্শনিকও ছিলেনবলা হয় দার্শনিক, মানে ফিলজফার, শব্দটি তিনিই প্রথম ব্যবহার করেনএই পিথাগোরাস মনে করতেন জগতের সবকিছুর মূলে রয়েছে সংখ্যাপিথাগোরাস ও তার শিষ্যদের (পিথাগোরিয়ান নামে পরিচিত) চেষ্টায় এই সংখ্যা তত্ত্বের (?) বিকাশতারা মানুষদেরও সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করতেনএই সংখ্যা মেলানোর ব্যাপার থেকেই আধুনিক প্রতারণা তত্ত্ব নিউমারোলজির উদ্ভব ও বিকাশনিউমারোলজিতে বলা হয়Ñ প্রাণীদের মতো সংখ্যারও চরিত্র আছে! (সর্বনাশ!) যেমন- জোড় সংখ্যার মানেই অশুভজোড় সংখ্যারা হলো স্ত্রীউল্টোদিকে বেজোড় সংখ্যা পুরুষ, তারা শুভ সূচক। (বোঝা যায়, পিথাগোরিয়ানরাও নারীবিদ্বেষী ছিলেন)এছাড়া ১ থেকে ৮-এই সংখ্যাগুলোর আলাদা স্বভাব১-কর্মঠ ও ইতিবাচক, ২-আলসে আর ভিতু, ৩-ভাগ্যবান, ৪-বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন, ৫-অভিযানপ্রিয়, ৬-গৃহী, ৭-সন্ন্যাসী, ৮-সংসারী ইত্যাদিঅবশ্য এসব নিয়ে আবার কিছু মতভেদও আছে
প্রত্যেক মানুষের জন্ম তারিখ বা তার নামের বর্ণগুলোর যোগফল তার ব্যক্তিত্ব ও ভবিষ্য সম্পর্কে অনেক কথা বলতে পারে বলে নিউমারোলজিতে বলা হয়, (চাপাবাজি আর কি!) এক্ষেত্রে ৯ থেকে বড় সংখ্যার অঙ্কগুলো পাশাপাশি যোগ করে নিতে হবেযেমন- ২৩৮ হবে ২+৩+৮ ১৩ = ১+৩ =৪
এভাবে জন্মদিনের তারিখ প্রত্যেকের শুভ সংখ্যাসপ্তাহের কোনদিন ছিল জন্মদিন সেই সংখ্যাও নাকি শুভশুভ সংখ্যার সঙ্গে নামের সংখ্যায় মিল করার জন্য অনেকে নামের বানানও পরিবর্তন করে ফেলে! এই ধরনের প্রচেষ্টার ফলে অনেক সময় আবদুল হয় আবদেল, কমলা হয় ক্যামেলিয়া কিংবা সলিমুদ্দি হয় সেলিম-দীন ইত্যাদি
নিউমারোলজি একটি প্রমাণিত চাপা শাস্ত্র হওয়ার পরেও মানুষের অজ্ঞতা ও অলৌকিকত্বে বিশ্বাসকে পুঁজি করে একদল অঙ্কবিদতাদের সম্পদ গড়ে তুলছেজ্ঞানবিজ্ঞানের ভালো রকমের প্রসার না হলে এসব জোচ্চারদের হাত থেকে সমাজের নি®কৃতি নেইমুশকিল হচ্ছে, এ সবের বিরুদ্ধে লড়ার মতো লোকবলের বড়োই অভাব
একটি বহুজাতিক কোম্পানি তাদের কোমল পানীয় পানের সঙ্গে গাড়ি, টাকা, ফুটবল পুরস্কার দিচ্ছেপত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরগুলো থেকে দেখা যায়, গাড়ি পাবার আশায় কোমল পানীয়ের প্রতি মানুষের আকর্ষণ াত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছেবাংলাদেশের বিখ্যাত পীর/জ্যোতিষদের কেই কি আমাকে বলতে পারবেন, কোন পাথর ব্যবহার করলে আমি অবশিষ্ট দুখানা গাড়ির একটির মালিক হতে পারবো?
Continue reading ...

প্রতারণার কোয়ান্টাম মেথড

0 লিখুন পোস্ট সম্পর্কে

কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি মিলনায়তনের একটি অনুষ্ঠানের খবর আমরা জানতে পারি পরদিন প্রকাশিত দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের পরিবেশিত সংবাদ থেকেএর শিরোনাম ছিল আচ্ছন্ন তন্দ্রায় নাকডাকা প্রশান্তিখবরের অংশ বিশেষ- ভার্সিটির ছাত্র, শিক্ষক সরকারী অফিসার ও উসুক তরুনেরা মহাজাতকের প্রশান্তিকরণ ক্যাসেটের সুরময় অনুনাদে দুই দুইবার আচ্ছন্ন তন্দ্রায় নাকও ডাকিতে শুরু করেন। ... জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর নুরুল ইসলাম এটিকে কেবল উকণ্ঠা নয়, ৪০ ভাগ শারীরিক জরামুক্তির সংগ্রাম হিসেবেও মূল্য দিয়াছেনউক্ত সভার প্রধান বক্তা শহীদ আল বোখারী (মহাজাতক) যেসব জ্ঞানগর্ভ উপদেশ খয়রাত করেন তার মূল কথা হলো- একমাত্র আহাম্মকের ভবিষ্য ভাগ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ঐ দিনের ঐ দৈনিকেরই প্রথম পাতায় একটি বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছেবিজ্ঞাপনটির অংশবিশেষ- নিজেই নিজের ভাগ্য নিয়ন্তা হোনমাত্র ২৮ ঘণ্টায় ব্যর্থতা থেকে সাফল্যের পথে যাত্রা শুরু করুনমন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এখন বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করছেবরেণ্য ভবিষদ্রষ্টা ও যোগ-গুরু মহাজাতক এখন শেখাচ্ছেন মন নিয়ন্ত্রণের সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কোয়ান্টাম মেথড...
বিজ্ঞাপনের ভাষ্য অনুযায়ী এর মাধ্যমে ছোট বড় নারী-পুরুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা অর্জন থেকে শুরু করে অর্থ-বিত্ত, ব্যবসা, পদোন্নতি, খ্যাতি ইত্যাদি সবই পাওয়া যাবেকোর্সটি হবে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলেবিজ্ঞাপনে অবশ্য কোর্স ফি উল্লেখ করা হয়নিতাহলে জানা যেত, আহাম্মকদের ঘাড়ে মহাজাতক কত টাকার কাঁঠাল ভেঙ্গে খাচ্ছেনমন নিয়ন্ত্রণের বৈজ্ঞানিকপদ্ধতি বলে আসলে কিছু নেইতদুপরি- সেটা কোয়ান্টামহবার কোনো কারণও নেইপদার্থবিজ্ঞানের যে শাখাটি কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা বা কোয়ান্টাম মেকানিক্স নামে পরিচিত, তার সঙ্গে এই কোর্সের কোন সম্পর্ক নেইআছে প্রতারণার সম্পর্ককোয়ান্টাম বিজ্ঞান সম্পর্কে জনসাধারণের অজ্ঞতা এবং উক্ত শব্দটির আলাদা একটি ব্যঞ্জনা ব্যবহার করে প্রতারণা করার পুরোনো কৌশল
চটকদার বুলি আউড়ে মানুষকে প্রতারণা করার এই কৌশল নতুন নয়মানুষের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে যেসব প্রতারক তাদের প্রাসাদ তৈরি করছে, এগুলো তাদের নিত্যদিনকার ব্যাপার আমাদের মতো দেশে, যেখানে অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বেড়া অনেক বড়; ভক্তি ও শক্তির যেখানে রাজকীয় যোগাযোগ, সেখানে হরহামেশা এসব ঘটনা ঘটবে এ আর নতুন কি! প্রতারকদের এসব অনুষ্ঠানে সমাজের জ্ঞানী গুণীরাও থাকবেন, এ তো আমরা হর-হামেশা দেখছিও
মানুষকে ঠকানোর জন্য আজতক যেসব পদ্ধতি মানুষ উদ্ভাবন করেছে, সম্ভবত জ্যোতিষশাস্ত্র তার শীর্ষ স্থানটি দখলে রাখতে পারেসেই অনেককাল আগে থেকে জ্যোতিষচর্চার নামে, ভাগ্য গণনার নামে মানুষকে প্রতারিত করে আসছে একদল সুযোগসন্ধানী মানুষহাল আমলে এই ধরনের ব্যবসায় নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারবিশ শতকের শেষ দশকে বিজ্ঞানের বিজয় রথ পূর্ণ বেগে ছুটে চলেছেএ সময় তাই যে কোনো বিষয়ে বিজ্ঞানের কোন ব্যাপার জুড়ে দিতে পারলে তা হয় আরো জোরালো
মানুষের চাঁদে যাওয়ার বিষয়টি যে সত্য নয়, বরং তা করো কারো ধর্মীয় বিশ্বাসের বারোটা বাজানোর জন্য বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র-এমন ধারা ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী লোকের সংখ্যাও কম নয় এদেশেযে কোনো প্রাকৃতিক দুর্ঘটনাকে কোন বিশেষ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় রত অনেক লোকএচক্রটি বেশ শক্তিশালীচানখারপুলের এলেম দ্বারা তদবির করে যে লোক, উট জবেহ করে জন্ম উসব পালনকারী কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মন্ত্রী যে কিনা আধ্যাত্মিক পাউডারের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়, তারা সকলেই এক সূত্রে গ্রথিতএদের সবারই উদ্দেশ্য এক, জনগণকে সত্যের স্বরূপ জানা থেকে বিরত রাখা
বিজ্ঞানের চলতি উন্নয়নের সঙ্গে নিজেদের প্রতারণা ব্যবসাকে আত্মীকরণের জন্য বিভিন্ন অপকৌশল ব্যবহৃত হয়ে আসছে অনেক দিন ধরেআলোচ্য কোয়ান্টাম মেথড-এর একটি উদাহরণ মাত্রনিয়মিত যারা হাটখোলার মোড়ের বিজ্ঞাপন নির্ভর দৈনিকটি পড়েন, তারা নিশ্চয়ই এই জাতীয় আরো প্রচারণা লক্ষ্য করে থাকবেনএ মুহূর্তে আমার আর একটি বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ছে, যার ভাষ্য ছিল অনেকটা এরূপ বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন বলেছেন, পদার্থ ও শক্তি এককাজেই, আপনার শরীর আসলে শক্তিই, অর্থা কিনা আলোবিভিন্ন ধরনের পাথরের রয়েছে আলোকে প্রতিফলিত, প্রতিসরিত করার ক্ষমতাকাজেই পাথর আলোর মাধ্যমে আপনার শরীরকে প্রভাবিত করে কারণ আপনি নিজে আলোচঅতএব সঠিক পাথর ব্যবহার করে নিজের ভাগ্য গড়ে তুলুনবাক্য বিন্যাস হুবহু এমত না হলেও বক্তব্য ছিলো এমনইসাধারণভাবে, বিজ্ঞান না জানা এবং অল্প বিজ্ঞান জানা ব্যক্তিদের জন্য এটি বেশ কনভিনসিংবিজ্ঞাপনটির বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্যণীয়ব্যবহৃত হয়েছে এমন একজন বিজ্ঞানীর নাম, যার পরিচিতি খুব ব্যাপকএখানে বিজ্ঞানের একটি তথ্য (শক্তি ও পদার্থ আসলে এক) পর্যন্ত ঠিক আছেকিন্তু এ থেকে যে সিদ্ধান্ত টানা হচ্ছে (আপনার শরীর আলো দ্বারা গঠিত) তা মোটেই সত্য নয়এভাবে সত্য থেকে মিথ্যায় উপনীত হবার যে টেকনিক উক্ত প্রতারক উদ্ভাবন করেছে তার কোন তুলনা হয় নাশক্তি ও পদার্থের অভিন্নতার তথ্যটিকে কাজে লাগিয়ে প্রতারক তার কাঙ্খিত ভবিষ্য গড়ে তুলছেন
হয়তো কিছু দিনের মধ্যে কম্পিউটারে ভাগ্য গণনাও শুরু হয়ে যাবে এদেশেফরচুন টেলারনামে এই ধরনের সফটওয়্যার এখন রয়েছেওএতে প্রথমে কোন ব্যক্তির জন্ম তারিখ (সঠিক দিন-ক্ষণ) ইনপুট হিসেবে দেয়া হয়, এর পর সফটওয়্যার উক্ত ব্যক্তির ভবিষ্য জীবন সম্পর্কে তথ্য দিতে থাকে- এর মধ্যে থাকে ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক অবস্থা, অর্থকরী, সঠিক পেশা ইত্যাদিসঠিক দিনক্ষণ দিতে না পারলেও আপত্তি নেইব্যক্তির কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বাড়তি ইনপুট হিসাবে দেয়া হয়এরপর বের হয়ে আসে ভবিষ্যতের পঞ্জিকা
এই ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে অজ্ঞ ও মূখ্য লোককে প্রতারিত করাটা সহজএমনকি চমকে দেয়া যায় অনেক শিক্ষিত লোককেও অথচ একটু ভাবলেই বোঝা যায়, কম্পিউটার প্রোগ্রাম কোনো ব্যক্তির ভবিষ্য সম্পর্কে কিছু বলতে পারে নাএ ধরনের সফটওয়্যার সম্পর্কে প্রিয় পাঠকদের যদি কোনো সংশয় থাকে, তাহলে ইনপুট হিসেবে কোন মৃত ব্যক্তির জন্মক্ষণ দিয়ে দেখতে পারেনফরচুন টেলারউক্ত ব্যক্তির চমকার ভবিষ্যবর্ণনা করতে থাকবে
বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান উন্নতি ও জ্ঞানকে নিজেদের সংকীর্ণ পরিমন্ডলে ব্যবহার করার আর একটি প্রবণতার উল্লেখ সম্ভবতঃ অপ্রাসঙ্গিক হবে নাদ্বিতীয় এ দলটি, প্রথম ও সাধারণ প্রতারক দলের চেয়ে ভিন্নতর, উদ্দেশ্যে ও কাজের ধারায়সাধারণ প্রতারকদের মূল লক্ষ্য হল, নিজেদের আর্থিক ও বৈষয়িক উন্নতিআর এই দলটির পরোক্ষ উদ্দেশ্য অর্থ ও ক্ষমতা লোভ হলেও বাহ্যতঃ এরা নিজেদেরকে অন্যভাবে উপস্থাপন করেতাদের ভাব হল, মানব জাতিকে উন্নতির পথ দেখানোর কাজে তারা নিয়োজিত
এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কতিপয় জ্ঞানপাপীনিজের আওতা বহির্ভূত ক্ষেত্রে জ্ঞান ফলানোতে আগ্রহী এসব জ্ঞানপাপীরা প্রবলভাবে দেশকে অন্ধকার ও মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিতে চায়সাধারণভাবে, জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিজ্ঞান চেতনার ব্যাপক প্রসারই কেবল এসব প্রগতি বিরোধিতার উপযুক্ত জবাব হতে পারেকিন্তু কে তা করবে?
Continue reading ...

ইএসপি ও টেলিপ্যাথিবিজ্ঞানের নামে প্রতারণা

0 লিখুন পোস্ট সম্পর্কে

এক বন্ধুকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছিখাওয়া-ধাওয়া আর গল্প-সল্প সবই হচ্ছিলহঠা বিষম লাগলো আমাররীতিমতো বেকায়দায় পড়ে গেলামহাঁচির দমকে টেবিল ফেলে দেবার দশা আর পাশে বসে দিব্যি হাসছে আমার প্রিয় বন্ধুটিকৌতুহলে তাকাতেই- তোমার কথা মনে করছে, কেউহাসতে হাসতে বললোআমার এই বন্ধুটি যা বলেছে, ঠিক সেই কথাগুলো আমরা হরহামেশা শুনি; যখনই খেতে বসে কারো বিষম লাগে, তখনইকনক্লুসন হলো- কেউ যদি কাউকে স্মরণ করে এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি যদি তখন খাবার টেবিলে থাকে তখনই বিষম লাগতে পারেলাগবেই, এটা জোর দিয়ে বলা যায় নাকারণ এই ঘটনা নির্ভর করছে স্মরণকারী ও যাকে স্মরণ করা হচ্ছে এই ব্যক্তির সম্পর্কের মধ্যেএই ছোট্ট ঘটনার তাপর্যপূর্ণ দিক হলো- এর মাধ্যমে আমরা বিশ্বাস করতে চাচ্ছি একজনের ভাবনাআর একজনের কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করতে পারেঅর্থা কোনো ক্ষেত্রে ভাবনাবা চিন্তার সাহায্যে অপর কোনো ব্যক্তিকে প্রভাবিত করা যায়অথবা নিজের ভাবনা তার মধ্যে সঞ্চারিত করা সম্ভব
যেমন এই গল্পটির কথা ভাবুন- কোনো ধনীর দুলালীর সন্তান হলো, যা ঐ মেয়ের অভিভাবকদের অনাকাংক্ষিতবাবা-মা প্ল্যান করে মেয়েকে বোঝালো সে একটি মৃত সন্তান প্রসব করেছেআসলে, সুস্থ সন্তানটিকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া হলোকিছুদিন পর দেখা গেলো ঐ ধনীর দুলালী সব সময় কানের কাছে মাডাক শুনতে পাচ্ছেশুধু তাই নয়, দেখা গেল দিনের পর দিন ঐ ডাক স্পষ্ট ও জোরালো হয়ে উঠছেস্বভাবতই এরপর গল্পে একজন সৌম্য, দাড়িওয়ালা মনোবিজ্ঞানীর আবির্ভাব ঘটেমনোবিজ্ঞানীর আবির্ভাব ঘটে মনোবিজ্ঞানী আবার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এবং লজিক ছাড়া এন্টিলজিকের ধারে-কাছেও যান নামনোবিজ্ঞানী ঘোষণা করলেন-ঐ মেয়ের হারিয়ে যাওয়া সন্তান দূরে কোথাও থেকে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে এবং সফল হচ্ছেবলার ভঙ্গিমার কারণে এই ধরনের গল্প প্রায়শ: বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে এবং পাঠকদের বিশাল অংশই টেলিপ্যাথিনামক কারো কারো একটি বিশেষ ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যান
বেশ, টেলিপ্যাথি কি? সংক্ষেপে, এ হলো কোনো রকম মাধ্যম ছাড়া দূরবর্তী কোনো স্থান থেকে চিন্তার ট্রান্সমিশনআর টেলিপ্যাথির মূল অর্থ হলো- চাপাবাজি ও প্রতারণা টেলিপ্যাথিকে গুরুত্ব দেন মনোবিদদের একটি বিশেষ দলএনারা নিজেদের বলেন, পরামনোবিদ (প্যারা সাইকোলজিষ্ট)আসলে হলেন বিশুদ্ধ চাপাবাজ (অথবা বোকা)এই পরামনোবিদ্যা (প্যারা সাইকোলজিষ্ট) অনুসারে টেলিপ্যাথি হলো এক প্রকার অতীন্দ্রিয় অনুভূতি, একস্ট্রা সেনসরি পারসেপশন বা সংক্ষেপে ইএপসি (ঊঝচ)অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার মানে হলো প্রকৃতির সঙ্গে বোঝাপড়া করার মানুষের যে পাঁচ ইন্দ্রিয় আছে, তার বাইরের কোনো ব্যাপার- স্পাই থ্রিলারের স্পাইদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ব্রিটিশ জেমস বন্ড কিংবা আমাদের মাসুদ রানা, এদের সবারই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়খুব শার্পনতুবা ঠ্যালা সামলানো খুবই কঠিন হবে যে!
ইএসপি বোঝানোর খুব সহজ ব্যাপার আছেধরুন, আপনি কোনো পরিসংখ্যান অফিসে চাকুরী করেনআপনার কাজ হলো মানুষের বাসায় টেলিফোন করে ঐ বাসায় একটি বিশেষ সাবান ব্যবহৃত হয় কি না তা খোঁজ নেয়াআপনি টেলিফোন ডাইরেক্টরী থেকে দশটি নম্বর বাছাই করলেন এবং আশ্চর্য হয়ে জানলেন ঐ দশটি বাসাতেই আপনার কাংক্ষিত সাবানটি ব্যবহার হচ্ছেআপনি খুব অবাক হতে পারেন, আবার নাও হতে পারেন কিন্তু আমরা ইতিমধ্যেই বুঝতে পারবো আপনার ইএসপি অসাধারণপরামনোবিদদের ভাষায় চিন্তা হলো তরঙ্গযখনই কেউ চিন্তা করে তখন সে আসলে তরঙ্গতৈরি করেমানুষ ঐ তরঙ্গের গ্রাহকযন্ত্র (রিসিভার) হিসেবে কাজ করতে সক্ষমকাজেই, ফ্রিকুয়েন্সি মিললে একজনের ভাবনা আর একজনের কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে ওঠেবলা বাহুল্য যে, এই ধরনের চিন্তা তরঙ্গের কোনো অস্তিত্ব আজ পর্যন্ত আবি®কৃত হয়নিহওয়ার কথাও নয়আর মানুষের মাথা যে রিসিভার নয়, তার বড় প্রমাণ আপনি নিজেকারণ, প্রতি মুহূর্তে আপনার চারপাশে বিস্তর তথ্য এদিক-সেদিক হচ্ছে, মাইক্রোওয়েভে বা বেতার তরঙ্গেএ সবের কিছুই আপনার এন্টেনা ধরতে পারছে না
ইএসপি ও টেলিপ্যাথিকে পুঁজি করে এই জগতে প্রচুর প্রতারকের আবির্ভাব ঘটেছে, ঘটছে এবং ঘটবেও যদি না সমাজ থেকে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে ঝেটিয়ে দূর করা যায় টেলিপ্যাথি সম্রাট নামে বিখ্যাত এই ধরনের একজন ধুরন্ধর প্রতারকের নাম ইউরি গেলার দীর্ঘ সময় ধরে, প্রচুর বোকা মানুষকে মোহিত করে ভদ্রলোকে অনেক টাকা কামিয়েছেন জারিজুরি ফাঁস হবার পর ভদ্রলোকের ইদানিং ব্যবসা মন্দাতবে, তাকে নিয়ে গালগল্প ফাঁদবারতো লোকের অভাব নেই এদেশেবিশেষ করে হাটখোলার সাপ্তাহিক ও সেগুনবাগিচার মাসিক পত্রিকাতো পাল্লা দিয়ে লিখেই চলছে
আপনার আশপাশে যে সব টেলিপ্যাথিক ক্ষমতার অধিকারী পীর, ফকির ও সাধুবাজীরা আছেন তাদেরকে দুটো পরীক্ষা করে দেখতে পারেনপ্রথমতঃ পকেট থেকে একটি টাকার নোট বের করে সেদিকে তাকিয়ে থাকুনখেয়াল রাখবেন টেলিপ্যাথিক বাবা যেন সেটি দেখতে না পায় এবার বাবাজীকে নোটের নম্বর জিজ্ঞেস করুনঅথবা বাবাজির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বাবাজীকে একটি কষে গালি দিনতারপরে জিজ্ঞেস করুন আপনার ভাবনা বাবাজী ধরতে পেরেছে কি না
পুনশ্চঃ যে বিষম খাওয়া নিয়ে এই লেখার শুরু সেই বিষম খাওয়ার মূল ব্যাপারটি, পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিখাদ্য বা পানি উদরে যাবার সময় অন্ননালীর পরিবর্তে যদি শ্বাসনালীতে ঢুকে পড়ে তাহলে শ্বাস রোধকারী একটা অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং প্রতিবর্তী ক্রিয়া হিসেবে হিক্কা, হাঁচির মাধ্যমে দুরবস্থার নিরসন হয়
Continue reading ...

বাণমারা কিংবা তাবিজকরা, প্রতারকের রমরমা

0 লিখুন পোস্ট সম্পর্কে

কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি মিলনায়তনের একটি অনুষ্ঠানের খবর আমরা জানতে পারি পরদিন প্রকাশিত দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের পরিবেশিত সংবাদ থেকেএর শিরোনাম ছিল আচ্ছন্ন তন্দ্রায় নাকডাকা প্রশান্তিখবরের অংশ বিশেষ- ভার্সিটির ছাত্র, শিক্ষক সরকারী অফিসার ও উসুক তরুনেরা মহাজাতকের প্রশান্তিকরণ ক্যাসেটের সুরময় অনুনাদে দুই দুইবার আচ্ছন্ন তন্দ্রায় নাকও ডাকিতে শুরু করেন। ... জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর নুরুল ইসলাম এটিকে কেবল উকণ্ঠা নয়, ৪০ ভাগ শারীরিক জরামুক্তির সংগ্রাম হিসেবেও মূল্য দিয়াছেনউক্ত সভার প্রধান বক্তা শহীদ আল বোখারী (মহাজাতক) যেসব জ্ঞানগর্ভ উপদেশ খয়রাত করেন তার মূল কথা হলো- একমাত্র আহাম্মকের ভবিষ্য ভাগ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ঐ দিনের ঐ দৈনিকেরই প্রথম পাতায় একটি বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছেবিজ্ঞাপনটির অংশবিশেষ- নিজেই নিজের ভাগ্য নিয়ন্তা হোনমাত্র ২৮ ঘণ্টায় ব্যর্থতা থেকে সাফল্যের পথে যাত্রা শুরু করুনমন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এখন বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করছেবরেণ্য ভবিষদ্রষ্টা ও যোগ-গুরু মহাজাতক এখন শেখাচ্ছেন মন নিয়ন্ত্রণের সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কোয়ান্টাম মেথড...
বিজ্ঞাপনের ভাষ্য অনুযায়ী এর মাধ্যমে ছোট বড় নারী-পুরুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা অর্জন থেকে শুরু করে অর্থ-বিত্ত, ব্যবসা, পদোন্নতি, খ্যাতি ইত্যাদি সবই পাওয়া যাবেকোর্সটি হবে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলেবিজ্ঞাপনে অবশ্য কোর্স ফি উল্লেখ করা হয়নিতাহলে জানা যেত, আহাম্মকদের ঘাড়ে মহাজাতক কত টাকার কাঁঠাল ভেঙ্গে খাচ্ছেনমন নিয়ন্ত্রণের বৈজ্ঞানিকপদ্ধতি বলে আসলে কিছু নেইতদুপরি- সেটা কোয়ান্টামহবার কোনো কারণও নেইপদার্থবিজ্ঞানের যে শাখাটি কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা বা কোয়ান্টাম মেকানিক্স নামে পরিচিত, তার সঙ্গে এই কোর্সের কোন সম্পর্ক নেইআছে প্রতারণার সম্পর্ককোয়ান্টাম বিজ্ঞান সম্পর্কে জনসাধারণের অজ্ঞতা এবং উক্ত শব্দটির আলাদা একটি ব্যঞ্জনা ব্যবহার করে প্রতারণা করার পুরোনো কৌশল
চটকদার বুলি আউড়ে মানুষকে প্রতারণা করার এই কৌশল নতুন নয়মানুষের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে যেসব প্রতারক তাদের প্রাসাদ তৈরি করছে, এগুলো তাদের নিত্যদিনকার ব্যাপার আমাদের মতো দেশে, যেখানে অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বেড়া অনেক বড়; ভক্তি ও শক্তির যেখানে রাজকীয় যোগাযোগ, সেখানে হরহামেশা এসব ঘটনা ঘটবে এ আর নতুন কি! প্রতারকদের এসব অনুষ্ঠানে সমাজের জ্ঞানী গুণীরাও থাকবেন, এ তো আমরা হর-হামেশা দেখছিও
মানুষকে ঠকানোর জন্য আজতক যেসব পদ্ধতি মানুষ উদ্ভাবন করেছে, সম্ভবত জ্যোতিষশাস্ত্র তার শীর্ষ স্থানটি দখলে রাখতে পারেসেই অনেককাল আগে থেকে জ্যোতিষচর্চার নামে, ভাগ্য গণনার নামে মানুষকে প্রতারিত করে আসছে একদল সুযোগসন্ধানী মানুষহাল আমলে এই ধরনের ব্যবসায় নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারবিশ শতকের শেষ দশকে বিজ্ঞানের বিজয় রথ পূর্ণ বেগে ছুটে চলেছেএ সময় তাই যে কোনো বিষয়ে বিজ্ঞানের কোন ব্যাপার জুড়ে দিতে পারলে তা হয় আরো জোরালো
মানুষের চাঁদে যাওয়ার বিষয়টি যে সত্য নয়, বরং তা করো কারো ধর্মীয় বিশ্বাসের বারোটা বাজানোর জন্য বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র-এমন ধারা ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী লোকের সংখ্যাও কম নয় এদেশেযে কোনো প্রাকৃতিক দুর্ঘটনাকে কোন বিশেষ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে নিজেদের ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় রত অনেক লোকএচক্রটি বেশ শক্তিশালীচানখারপুলের এলেম দ্বারা তদবির করে যে লোক, উট জবেহ করে জন্ম উসব পালনকারী কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মন্ত্রী যে কিনা আধ্যাত্মিক পাউডারের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়, তারা সকলেই এক সূত্রে গ্রথিতএদের সবারই উদ্দেশ্য এক, জনগণকে সত্যের স্বরূপ জানা থেকে বিরত রাখা
বিজ্ঞানের চলতি উন্নয়নের সঙ্গে নিজেদের প্রতারণা ব্যবসাকে আত্মীকরণের জন্য বিভিন্ন অপকৌশল ব্যবহৃত হয়ে আসছে অনেক দিন ধরেআলোচ্য কোয়ান্টাম মেথড-এর একটি উদাহরণ মাত্রনিয়মিত যারা হাটখোলার মোড়ের বিজ্ঞাপন নির্ভর দৈনিকটি পড়েন, তারা নিশ্চয়ই এই জাতীয় আরো প্রচারণা লক্ষ্য করে থাকবেনএ মুহূর্তে আমার আর একটি বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ছে, যার ভাষ্য ছিল অনেকটা এরূপ বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন বলেছেন, পদার্থ ও শক্তি এককাজেই, আপনার শরীর আসলে শক্তিই, অর্থা কিনা আলোবিভিন্ন ধরনের পাথরের রয়েছে আলোকে প্রতিফলিত, প্রতিসরিত করার ক্ষমতাকাজেই পাথর আলোর মাধ্যমে আপনার শরীরকে প্রভাবিত করে কারণ আপনি নিজে আলোচঅতএব সঠিক পাথর ব্যবহার করে নিজের ভাগ্য গড়ে তুলুনবাক্য বিন্যাস হুবহু এমত না হলেও বক্তব্য ছিলো এমনইসাধারণভাবে, বিজ্ঞান না জানা এবং অল্প বিজ্ঞান জানা ব্যক্তিদের জন্য এটি বেশ কনভিনসিংবিজ্ঞাপনটির বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্যণীয়ব্যবহৃত হয়েছে এমন একজন বিজ্ঞানীর নাম, যার পরিচিতি খুব ব্যাপকএখানে বিজ্ঞানের একটি তথ্য (শক্তি ও পদার্থ আসলে এক) পর্যন্ত ঠিক আছেকিন্তু এ থেকে যে সিদ্ধান্ত টানা হচ্ছে (আপনার শরীর আলো দ্বারা গঠিত) তা মোটেই সত্য নয়এভাবে সত্য থেকে মিথ্যায় উপনীত হবার যে টেকনিক উক্ত প্রতারক উদ্ভাবন করেছে তার কোন তুলনা হয় নাশক্তি ও পদার্থের অভিন্নতার তথ্যটিকে কাজে লাগিয়ে প্রতারক তার কাঙ্খিত ভবিষ্য গড়ে তুলছেন
হয়তো কিছু দিনের মধ্যে কম্পিউটারে ভাগ্য গণনাও শুরু হয়ে যাবে এদেশেফরচুন টেলারনামে এই ধরনের সফটওয়্যার এখন রয়েছেওএতে প্রথমে কোন ব্যক্তির জন্ম তারিখ (সঠিক দিন-ক্ষণ) ইনপুট হিসেবে দেয়া হয়, এর পর সফটওয়্যার উক্ত ব্যক্তির ভবিষ্য জীবন সম্পর্কে তথ্য দিতে থাকে- এর মধ্যে থাকে ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক অবস্থা, অর্থকরী, সঠিক পেশা ইত্যাদিসঠিক দিনক্ষণ দিতে না পারলেও আপত্তি নেইব্যক্তির কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বাড়তি ইনপুট হিসাবে দেয়া হয়এরপর বের হয়ে আসে ভবিষ্যতের পঞ্জিকা
এই ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে অজ্ঞ ও মূখ্য লোককে প্রতারিত করাটা সহজএমনকি চমকে দেয়া যায় অনেক শিক্ষিত লোককেও অথচ একটু ভাবলেই বোঝা যায়, কম্পিউটার প্রোগ্রাম কোনো ব্যক্তির ভবিষ্য সম্পর্কে কিছু বলতে পারে নাএ ধরনের সফটওয়্যার সম্পর্কে প্রিয় পাঠকদের যদি কোনো সংশয় থাকে, তাহলে ইনপুট হিসেবে কোন মৃত ব্যক্তির জন্মক্ষণ দিয়ে দেখতে পারেনফরচুন টেলারউক্ত ব্যক্তির চমকার ভবিষ্যবর্ণনা করতে থাকবে
বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান উন্নতি ও জ্ঞানকে নিজেদের সংকীর্ণ পরিমন্ডলে ব্যবহার করার আর একটি প্রবণতার উল্লেখ সম্ভবতঃ অপ্রাসঙ্গিক হবে নাদ্বিতীয় এ দলটি, প্রথম ও সাধারণ প্রতারক দলের চেয়ে ভিন্নতর, উদ্দেশ্যে ও কাজের ধারায়সাধারণ প্রতারকদের মূল লক্ষ্য হল, নিজেদের আর্থিক ও বৈষয়িক উন্নতিআর এই দলটির পরোক্ষ উদ্দেশ্য অর্থ ও ক্ষমতা লোভ হলেও বাহ্যতঃ এরা নিজেদেরকে অন্যভাবে উপস্থাপন করেতাদের ভাব হল, মানব জাতিকে উন্নতির পথ দেখানোর কাজে তারা নিয়োজিত
এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কতিপয় জ্ঞানপাপীনিজের আওতা বহির্ভূত ক্ষেত্রে জ্ঞান ফলানোতে আগ্রহী এসব জ্ঞানপাপীরা প্রবলভাবে দেশকে অন্ধকার ও মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিতে চায়সাধারণভাবে, জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিজ্ঞান চেতনার ব্যাপক প্রসারই কেবল এসব প্রগতি বিরোধিতার উপযুক্ত জবাব হতে পারেকিন্তু কে তা করবে?
Continue reading ...
 

WELCOME_PRINCE COMPUTER & MOBILE SOFTWARE. - Copyright © 2012 - All Rights Reserved | Blogger Theme by BTDesigner | Proudly powered by Blogger